ডিটেকটিভ স্পোর্টস ডেস্ক
ম্যাচ শেষে পেরুভিয়ানদের বর্ণিল উৎসব হলে মন্দ হতো কি? কিন্তু রেফারি শেষ বাঁশি বাজতেই টিভি ক্যামারা যখন পেরুর ডাগ আউটকে খুঁজে নিল, তখন সেখানে উচ্ছ্বাস কোথায়। অথচ অস্ট্রেলিয়াকে ২-০ গোলে হারিয়ে বিশ্বকাপ ইতিহাসে ৪০ বছর পর জয় ধরা দিল দলটির। সর্বশেষ দল হিসেবে রাশিয়া বিশ্বকাপে নিজেদের নাম লিখিয়েছিল পেরু। ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বরে থাকা দলটি ‘সি’ গ্রুপ ফ্রান্স ও ডেনমার্কের সঙ্গে দারুণ লড়াই করেও হেরেছে সমান ০-১ ব্যবধানে। বিশ্বকাপ থেকে বাদ পড়াটা তাই নিশ্চিত হয়ে গিয়েছিল আগেই। মঙ্গলবার শুধু একটা জয় নিয়ে ফেরার সুযোগ ছিল। ১৯৮২ সালের পর বিশ্বকাপে ফিরে সেই একটা জয় তো কম প্রাপ্তি হওয়ার কথা নয়। অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে পেরু তাই কিছুটা প্রাপ্তি নিয়েই রাশিয়া থেকে ফিরছে।
সোচিতে বাংলাদেশ সময় রাত ৮টায় মুখোমুখি হয়েছিল পেরু ও অস্ট্রেলিয়া। ম্যাচের ১৮ মিনিটে আন্দ্রে কারিলোর গোলে লিড নেয় পেরু। দ্বিতীয়ার্ধের ৫০ মিনিটে অধিনায়ক পাওলো গুয়েরেরো গোল করে ব্যবধান বাড়ান। শেষ পর্যন্ত ওই দুই গোলেই জয় পেরুর। ইতিহাস বলছে ১৯৮২ বিশ্বকাপের পর এই প্রথম খেলতে আসা পেরু বিশ্বকাপে সর্বশেষ জিতেছিল সেই ১৯৭৮ সালে। এদিন অস্ট্রেলিয়াকে হারিয়ে ৪০ বছর পর বিশ্বকাপে জয়ের দেখা পেল দলটি। সেবার ইরানকে তারা হারিয়েছিল ৪-১ ব্যবধানে।
অথচ এই ম্যাচের চিত্র নাট্যে বিপরীত হবে, এমনটাই ধারনা ছিল সবার। অস্ট্রেলিয়া নিজেদের প্রথম ম্যাচে ফ্রান্সের কাছে হারলেও পরের ম্যাচে ডেনমার্কের সঙ্গে ড্র করেছিল। তাই ২ ম্যাচে ১ পয়েন্ট ছিল দলটির। এদিন অস্ট্রেলিয়া পেরুকে হারালে আর অন্যদিকে একই সময় শুরু হওয়া ফ্রান্স-ডেনমার্ক ম্যাচে ডেনিসরা হেরে গেলে সকারুদের আশা থাকতো। কিন্তু পেরু যে অস্ট্রেলিয়াকে দাঁড়াতেই দিল না। অবশ্য ওদিকে ফ্রান্স-ডেনমার্ক ম্যাচ ড্র হওয়ায় অস্ট্রেলিয়া জিতলেও আর কিছু ভালের হতো না।
র্যাঙ্কিংয়ে ১০ নম্বর পজিশনটাই বলছে পেরুভিয়ানদের শক্তি। যদিও ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছিল তারা। তবে বিশ্বকাপের ঠিক বড় দলতো আর নয় পেরু। তাই ফ্রান্স ও ডেনমার্কের সঙ্গে শেষ পর্যন্ত পেরু ওঠেনি তারা। তবে র্যাঙ্কিংয়ে ৪৩ নম্বরে থাকা অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ঠের এগিয় থাকা দল দক্ষিণ আমেরিকার দেশটি।
এদিন ম্যাচ শুরুর পর খুব বেশি সময় লাগেনি তা বুঝতে। ম্যাচের ১৮ মিনিটেই উইঙ্গার আন্দ্রে কারিলো বল প্রতিপক্ষের জালে জড়ালেন। গোলে ১-০ গোলে এগিয়ে যাওয়া পেরুর। ৩৬ বছর পর বিশ্বকাপে পেরুর প্রথম গোলটি এলো তার পা থেকে। অস্ট্রেলিয়া অবশ্য সমতায় ফেরতে পারত ২৯ মিনিটেই। কিন্তু টম রগিচ হতাশ করেন। পেরু প্রথমার্ধ শেষ করে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে থেকে।
দ্বিতীয়ার্ধের খেলা শুরু হতেই ৫০ মিনিটে গোল করে ব্যবধান বাড়ান পেরুর অধিনায়ক পাওলো গুয়েরেরো। ৩৪ বছর ১৭৬ দিন বয়সে গোল করলেন এই ফরোয়ার্ড। দক্ষিণ আমেরিকার খেলোয়াড়দের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বয়সীর তালিকায় যা তৃতীয়। দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে বয়সী খেলোয়াড় হিসেবে গোলকরার কীর্তি উরুগুয়ের জাচিন্তো ভারেলার। দ্বিতীয় স্থানে আছেন আর্জেন্টিনার মার্টিন মালের্মো।
২-০ গোলে পিছিয়ে পড়ার অস্ট্রেলিয়া আর লড়াই জমাতে পারেনি। যদিও বল দখরে কিছুটা এগিয়ে থাকলো দলটি। অফ টার্গেটে পেরুর চেয়ে ঠের বেশি শট তাদের। লক্ষ্য ভেদে দুরুন্ত পেরুর জয় শেষ পর্যন্ত। অস্ট্রেলিয়ার টানা তিন আসরে বিদায় গ্রুপ পর্ব থেকে।
‘সি’ গ্রুপ থেকে সেরা হয়ে দ্বিতীয় পর্বে উঠল ফ্রান্স। দ্বিতীয় ডেনমার্ক। শেষ ষোলতো ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ হবে ‘ডি’ গ্রুপের রানার্সআপরা। ডেনমার্কের প্রতিপক্ষ হয়ে ‘ডি’ গ্রুপের চ্যাম্পিয়নরা। রাতে যে গ্রুপের হিসেব চুকবে। সেখানে ক্রোয়েশিয়ার সঙ্গী হবে আর্জেন্টিনা না নাইজেরা, প্রশ্ন সেটিই।